যৌবন-তারুণ্যের উত্তাল জীবনের এক নাগাড়ে ২৭ বছর। ভাবতে পারেন আপনার ছেলে মেয়ে হলে কী করতেন? আমি তো আমার বাবা-মায়ের প্রবল বাধা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের বিদেশ যাওয়ার প্রবল প্রলোভন আর ভালোবাসা পেছনে ফেলে দৈনিক জালালাবাদের অসীম প্রেম ভালোবাসার মাঝে হারিয়ে গেছি। গড়ে তুলেছি একটি জনপ্রিয় দৈনিক। এই দৈনিকে আমার সমকক্ষ তাই আর কেউ নয়। পরিশ্রম ও মেধায় পদবি অর্জন করেছি। সাংবাদিকতাকে নিজের আখের গোছাতে ব্যবহার করিনি। অবৈধভাবে বাড়ি-গাড়ি কিংবা জায়গা-জমির মালিক হইনি।
আমি দেশ-বিদেশে সুপরিচিত একজন সত্যিকার পেশাদার, দেশপ্রেমিক, নির্ভীক ত্যাগী, দু:সাহসি ও সকল দল-মত-পথের ঊর্ধ্বে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় একজন নিরীহ সাংবাদিক। ৩০ বছর ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, অমানুষিক পরিশ্রম আর নিজের সর্বোচ্চ মেধাকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রমী সাংবাদিকতার এক সৌধশিখর গড়ে তুলেছি। সাংবাদিকতাকে ব্যাপকভাবে সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজ-সভ্যতার নতুন গতিপথ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছি। আমি সাংবাদিকতাকে নিজের আখের গোছাতে ব্যবহার করিনি।
এক নাগাড়ে দিন-রাতে, সকাল-বিকেলে দৈনিক জালালাবাদে যে ২৭টি বছর পার করেছি তার সমকক্ষ আর কেউ নয়।
কেউ নিজের স্বার্থসিদ্ধি আদায় করতে সম্পাদকের চেয়ারে বসে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়েছেন, অফিসকে আবাসন ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে সাংবাদিকতার সীমানা ছাড়িয়ে বিতর্কিত হয়ে পত্রিকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাকে মালিকপক্ষ চরম বেইজ্জত করে বিদায় করেছে। আর আমি সেদিন মালিকপক্ষের বিরাগভাজন হয়ে তাকে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে স্বাভাবিকভাবে বিদায় করে সম্পাদকের পদকে সম্মানিত করেছিলাম।
আমি জালালাবাদকে ব্যবহার করে ৩০/৪০ বার ইংল্যান্ডে যাইনি। সে সময়ে অমানুষের মতো গাধার খাটুনি খাটিয়ে এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রেখেছি। জালালাবাদের একাউন্ট ব্যবহার করে বিদেশে সফর করলেও একটি মানুষের সাথে কখনো কোনোদিন জালালাবাদ নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। নিজের আখের গোছাতে লাখ লাখ টাকা পকেটে পুরা হয়েছে।
নিজের বড়ত্ব আর অহংকার জাহির করে ক্ষমতাসীন বিএনপির জেলা সভাপতি ও এমপি ইলিয়াস আলীসহ দলের নিউজ ৫/৬ বছর বন্ধ করে দিয়ে যৌবনে পা দেয়া একটি সম্ভাবনাময় দৈনিককে পঙ্গু করে দেয়নি। সিলেট প্রেসক্লাবে বার বার সভাপতি হওয়ার বাসনায় নিজের পত্রিকাসহ আশপাশের কাউকেই নির্বাচনে দাঁড়াতে দিইনি। ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষকে ভালো মানুষ সাজিয়ে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা করিনি।
আমি চ্যালেন্জ নিয়েছি। যখন সম্পাদক- বার্তা সম্পাদক নেই তখন একাই সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক আর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি বছরের পর বছর। এ সময়ই জালালাবাদ সবচেয়ে কোয়ালিটি ধারণ করেছে।
পাঠকের অপার ভালোবাসায় আমি ও আমার পরিশ্রমী টিম সিক্ত হয়েছি। কারণ আমাদের জন্ম সাংবাদিকতা করে, রিপোর্ট লিখতে লিখতেই জীবনের ৩০টি বসন্ত পার করেছি।
সাংবাদিকতার নামে সম্পাদকগিরি করতে গিয়ে অফিসটাকে ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার কোনো ধান্দা করিনি। যখন স্বার্থ নেই তখন ছেড়ে যাওয়া আর যখন খুব প্রয়োজন তখন ফিরে আসার চেষ্টা করতে হয়নি আল্লাহর রহমতে।
দৈনিক জালালাবাদের সামনের দরজায় আরেকটা দৈনিক বের করে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে আরেকজনের লাখ লাখ টাকা
লুট করে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে ধর্ণা দেয়নি।
আমি বা আমরা এমন অমানবিক বা হিংসুটে নয় যে- জুনিয়রদের সাথে বিরোধ তৈরি করে নিজের ক্লাবের নিউজ বন্ধ
করতে দ্বিধাবোধ করিনি।
আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নিজাম উদ্দীন সালেহর মতো কবি ও সাংবাদিকের পুরস্কার এবং সম্মাননার নিউজ সারা অফিসের ছোট-বড় সবার অনুরোধ সত্ত্বেও না ছাপানোর মতো ধৃষ্টতা ও নিষ্ঠুরতা আমরা দেখাইনি। এতোসব তিনি জালালাবাদের স্বার্থেই (!!!) করেছেন। এসবে মহান সাংবাদিকতার শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে! এতে “বিস্মিত “হওয়ার কিছুই পাননি ” সিন্ডিকেট আর সিইও ” নামধারী সংবাদমাধ্যম আইন সংবিধান না জানা অজ্ঞ জ্বি-হুজুরের দল! একজন সাংবাদিককে পেশাগত অতি প্রয়োজনে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয়াই সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেলো?
একটি দৈনিক পত্রিকার একজন নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব, এখতিয়ার ও ক্ষমতা কতোটুকু তাতো জানার চেষ্টা করেননি আপনারা। জানতে চান? তাহলে জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠ, যুগান্তর, সমকালসহ নামিদাসি দৈনিকের অফিস ঘুরে আসেন। যেটা জানেন না, সেটা নিয়ে লিখতে যান কেনো? একজন নির্বাহী সম্পাদকও একটি দৈনিক পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সাক্ষরে নিয়োগ, প্রত্যয়নসহ অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিঠি আদান প্রদান হয়। দৈনিক জালালাবাদেও যখন প্রয়োজন তখন এটা হয়েছে। প্রেস পলিটিক্স বলে একটা কথা আছে। অনেক সময় এই কারণে বা পেশাগত প্রয়োজন পূরণের স্বার্থে কাউকে না কাউকে কিছু কাগজপত্র দেয়া হয়। দৈনিক জালালাবাদেও প্রেসক্লাবের নির্বাচনের সময় এলে সভাপতি পদ টিকিয়ে রাখতে চরম অনিয়ম ও অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে স্টাফ রিপোর্টার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিজেদের এসব ইতিহাস ভুলে গেছেন? ব্রান্মণ আর ঠাকুরেরা যা করেন তা ঠিক, আর অন্যরা ঠিক একই কাজ করলে এটা মহাপাপ!
দৈনিক জালালাবাদ ছাড়ার তিনবছর পর কোঅপ্ট করে প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে একজনকে (তিনি তখন সাংবাদিকতায় ছিলেন না) নেয়ার পর সারা কমিউনিটিতে ছি. ছি. রব পড়েছিল। মনে নেই!
( লেখা শেষ নয়। চলবে। ২৮ বছরের ইতিহাস সামনে সেই ইতিহাসের নিষ্ঠুর, নির্মম কাহিনী শোনাবো ইনশা আল্লাহ। খালেদ, আবু বকর, শাফী, লবিদ চৌধুরীরা কীভাবে বিদায় নিয়েছে সব জানানো হবে। )
Leave a Reply