সিলেটভিউসহ সিলেটের আরো দু’তিনটি নিউজ পোর্টাল ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে খবর প্রকাশ করার কারণে আপনারা আরাম আয়েশে চাকরি করতে পারছেন। যদি এসব পোর্টাল না থাকতো তাহলে আপনাদের অফিসে আসতে হতো আরও কয়েক ঘণ্টা আগে। নিউজের তথ্য সংগ্রহ করতে কতটুকু বেগ পোহাতে হয় সেটি জানাই আছে। বিকেলবেলা একজন আরেকজনকে ফোন দিতেন ‘কিচ্ছু আছেনি বা’। নিউজের তথ্য সংগ্রহ করতে মাসে মোবাইল ফোনে যে কতটাকা বাড়তি যেত, আর এখন যে কত সেভ হচ্ছে সেটির দিকে কি খেয়াল রাখছেন হে গুরুজনেরা?
সিলেটভিউসহ আরো দু’তিনটি পোর্টালের রিপোর্টাররা থিম বের করে দেন আপনাদের। দেন নিউজের খোরাক। সেটি প্রতিদিনই আমরা সবাই দেখতে পাই। মানুষ পরেরদিনের প্রিন্ট পত্রিকায় কিংবা টিভি চ্যানেলে নিউজ দেখার আগ্রহ দিনে দিনে হারিয়ে ফেলেছে প্রযুক্তির এই যোগে। একজন মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেট কিনবে, আবার টাকা দিয়ে পত্রিকাও পড়বে সেটি এখন অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া বর্তমানে কতজনই বা বাসায় ডিস লাইন লাগিয়ে রেখেছেন। যদিও অনেকে রেখেছেন সেটি ঘরে মেহমান আসলে অন করা হয়। কিংবা টক-শো দেখা হয়, নিউজ না।
বর্তমানে যেকোনো সময় খবরাখবর পেতে মানুষ এখন অনলাইন পোর্টালের উপর নির্ভর করে- রাত যতই গভীর হোক কিংবা যেকোন সময়ই হোক। আর জাতীয় পত্রিকাওতো এখন প্রিন্ট ভার্সনের উপর চলছে না। সবারই আছে অনলাইন ভার্সন। যে টিভি চ্যানেল দেশে মানুষ সংবাদের তৃষ্ণা মেটাতো, সেই টিভি চ্যানেলও এখন যুগের সাথে থেকে দুই চারলাইন নিউজ আপ দিয়ে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে।
ফেসবুকও এখন দিচ্ছে অনলাইন সাংবাদিকদের ট্রেনিং। উন্নত দেশগুলোতেও মোবাইল সাংবাদিকদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। তারাও বুঝতে পারছে- মানুষের আগ্রহ বা ঝুঁকে পড়া কোনদিকে। এইতো গতকালই দেখেলাম সিলেটের এক সিনিয়র সাংবাদিক, আমার শ্রদ্ধেয় ভাই তিনিও ফেসবুক থেকে অনলাইনে ট্রেনিং নিয়েছেন সাংবাদিকতা বিষয়ে।
আসি এখন লাইভ করা প্রসঙ্গে। লাইভের ক্ষেত্রে আমারও প্রশ্ন আছে আপনাদের মতো। লাইভ তাদের জন্য করাই মানায় যারা প্রকৃত সাংবাদিক। কারণ সাংবাদিকতা না জানলে আপনি হয়তো লাইভ করার সময় কারো বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেন। এখন যেকেউ একটি বুম কিনে হয়ে যাচ্ছেন লাইভ সাংবাদিক। আগে সাংবাদিকতা শিখে পরে লাইভ করতে আসাটাই উচিত।
সিলেটে প্রকৃত সাংবাদিকদের লাইভ করতে কিছু সিনিয়র সাংবাদিকরা অনেকসময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। খাটান প্রভাবও। হে গুরুজনেরা, বিগত কয়দিন ঢাকায় পরীমণির বিভিন্ন সংবাদ কাভার করতে মেইন স্ট্রিমের সাংবাদিক যতজন দেখেছি লাইভম্যানও ততজনই দেখেছি। ঢাকায় তো মেইন লাইনের সাংবাদিকেরা লাইভারদের সরিয়ে দিতে দেখিনি! তাহলে সিলেটে সমস্যা কোথায়?
সিলেট কোর্ট পয়েন্ট কয়েকমাস আগে এক সভা চলছিল। রাজনৈতিক এক নেতা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন ওনার হাতে বুম ছিল মাত্র ২টি। বক্তৃতা তেমন ভালো হচ্ছিলো না। কিন্তু ৪/৫ মিনিট পর আরো কয়েকটি বুম যুখন আসলো তখন তাঁর তেজস্বী বক্তৃতায় কেঁপে ওঠে গোটা কোর্ট পয়েন্ট। কারণ নেতারাও ২/১ টি বুমে বক্তৃতা দিতে আরাম পান না। কয়েকটি হলে সাউন্ড ভালো হয়। সেটিও এখন বুঝতে হবে আপনাদের।
এছাড়া টিভি চ্যানেলেতো ছোট-খাটো অনুষ্ঠান কাভার করে না। তাহলে লাইভেই মানুষের ভরসা। আর যে দুই এক চ্যানেল দেখাবে আপনাকে টাকা দিতে হবে ৪/৫ হাজার। তাও দেখাবে মাত্র ১০-২০ সেকেন্ড। আর সময় তো কখন তা কিন্তু বলা দায়। তাহলে ৪/৫ লাখ ফলোয়ারের বাংলাভিউ কিংবা ভয়েস অফ সিলেট মানুষ নেবে না কেন? সারা অনুষ্ঠান লাইভ দেখাচ্ছে তারা। এছাড়া ঘটনাস্থল মানুষ এখন সরাসরি দেখতেই পছন্দ করেন।
সব কথার মূল কথা হচ্ছে- যুগের সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলাটাই উচিত, সারাবিশ্ব যেভাবে চলছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ভুল বুঝিয়ে আপনারা অনলাইন সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু নিজেরাই হারলেন। জাতি কিন্তু এসব ভালো করে বুঝে এবং আপনাদের ধিক্কার দেয়।
লেখক : জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সিলেটভিউ২৪
Leave a Reply