হিল্লোল পুরকায়স্থ, দিরাই (সুনামগঞ্জ) :
ফুল কম-বেশি সবাই ভালোবাসেন। কেউ কিনতে, কেউ চাষ করতে, আবার কেউ তার সৌন্দর্য দেখতে। এজন্য সবাই ফুলের কাছে ছুটে যান। আর এ ফুল যদি হয় শস্য ক্ষেতের সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী, তাহলে তো কথাই নেই।
এমনই এক চিত্র দেখা যায় সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই পৌরশহতলীর ১নং ওয়ার্ডের চন্ডিপুর গ্রামে। যেখানে হাজারো ফুলপ্রেমী প্রতিদিন জড়ো হন একখন্ড জমির সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার।যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
সরেজমিন দেখা যায় দিরাই পৌরসদরের মধ্যবাজার হতে ২/৩ কিলোমিটার দূরে চন্ডিপুর গ্রামের ১ বিঘা পতিত জমিতে এই দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন জাকারিয়া মিয়া নামে ওই গ্রামের এক তরুণ । কালনী নদীর তীরে পতিত জমিতে বিশাল জায়গা জুড়ে করেছেন ভূট্রা,সবজি ও সূর্যমুখী চাষ। ভূট্টা ও সবজি ক্ষেতের মধ্যে ১ বিঘার সূর্যমুখী ফুলের বাগান নজর কেড়েছে দর্শনার্থীর।
আর সূ্র্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে আসছে অসংখ্য মানুষ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু পরিবেশ হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাগানে ছুটে আসছেন জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রকৃতির এই ফুলপ্রেমীরা। মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করেত চাইছেন না কেউ। সেইসঙ্গে সেলফি, গ্রুপ ছবি তো আছেই। ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ দেখাচ্ছেন অনেকে,সাক্ষাতকার নিচ্ছেন বাগান মালিকের। সবুজ মাঠের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।
বাচ্ছাদেরকে নিয়ে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, আমাদের এ প্রজন্মের শিশু–কিশোরই নয়, সকল বয়সের লোকজনের বিনোদনের কোন স্থান নেই। এই মৌসুমে সূর্যমুখী ফসলের জমিকে ঘিরে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ছোট,বড় সকলের বিনোদনের কিছুটা ঘাটতি পূরণ করছে। এখানে এসে সূর্যের হাসিখ্যাত সূর্যমুখীই নয়, নানা জাতের সবজি, ভূট্টা, সরিষা,হাওরের খোলামেলা পরিবেশের সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচিতি হওয়ার সুযোগটাও যুক্ত হয়েছে।
ঘুরতে আসা দিরাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী আনিজ ফাতেমা বলেন,আমার খুব ভাল লাগছে।কত সুন্দর ফুল এর আগে আমি কখনও দেখিনি। আব্বা এখানে আমায় নিয়ে এসেছে।
ঐ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রফু মিয়া বলেন, প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। তারা এখানে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছেরে দেন আর এটা মানুষ জানে যার ফলে প্রতিদিনই দর্শনার্থী বাড়ছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হক চৌধুরী (তুহিন) বলেন, আমরা বিগত সময় সূর্যমুখী তেলের উপর দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি কৃষি সম্প্রসারক অধিদফতরের মাধ্যমে পরে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় সরকারি সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহ করি এবং কৃষকদের কে সেই বীজ দিয়ে থাকি। আমরা কৃষকদের উদ্বত করি তাদের আমরা বলি আমরা একসময় সোয়াবিন তেল খাইছি,সোয়াবিন হার্টের জন্য, ডায়াবেটিস শরীলের চর্বি জমে,আমরা মোটা হই তাই সোয়াবিন ব্যবহারের পথ থেকে সরে আসতে হবে। হাড় ভালো রাখে, সূর্যমুখী বীজ আমাদের শরীরের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে সূর্যমুখী তেল।
তাছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী বীজ থেকে পাওয়া তেল দশগুণ বেশী পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে আমরা আমাদের নিজেদের জন্য যেটুকু চাহিদা সেইটুকু উৎপাদন করব সূর্যমুখী এবং সরিষা। আমাদের দাদাদের আমলে তারা সরিষার তেল খেয়েছেন তখনত সোয়াবিন তেল ছিলনা তাদের শরীলও ভাল ছিল। সূর্যমুখী ফুলের তেল যারা খাবে তাদের ডায়াবেটিস হবেনা, হার্ট এটাক হবেনা এটা আমরা ট্রেনিংয়ে পাইছি। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তাছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে তা হলে আমরা কেন পারবনা। এভাবে আমরা কৃষকদের উদ্বত করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জাকারিয়া ভাইকে প্রথমে উদ্বুদ্ধ করি, পরে বীজ দেই। আমাদের কথায় জাকারিয়া ভাই উদ্বত হয়ে বনজঙ্গল কেটে চাষাবাদ করেন।
জাকারিয়া মিয়া বলেন, আমি একজন কাট ব্যবসায়ী। পাশাপাশি কৃষিকাজাও করি। কিন্তু এই প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে আমরা যে সোয়াবিন তেল খাই সেটা শরীলের জন্য ভালনা সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছি। আমি বাগানটি খোলা রেখেছি সেই সাথে গাছ গুলো দূর দূর রোপন করেছি যাথে মানুষ আসতে পারে ছবি তুলতে পারে। আসলে এটা আমি অনেকটা শখেই চাষ করেছি। প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী আসছে তারা ছবি তুলছেন। কেউ মনের সুখে গানও গাচ্ছেন। এসব দেখে আমি নিজেও আনন্দিত, দর্শনার্থীরা এসে ছবি তুলছেন বিষয়টি আনন্দদায়ক।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু যখন দর্শনার্থীরা ছবি তুলতে এসে ফুল গুলো নষ্ট করেফেলেন সে গুলো খুবই কষ্টদায়ক লাগে। কোন কোন দর্শনার্থী সূর্যমুখী ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে, গাছ ঙেংগে ফেলে আমার বাগানের ক্ষতি করে ফেলে তাই আমি তার কাটার বেড়া দিয়ে রেখেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগামীতে একএকর জমিতে সূর্যমুখীর চাষাবাদের আশা করছি।
Leave a Reply